অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল: ঘরে বসেই ই-রিটার্ন জমার সম্পূর্ণ গাইড
আয়কর অফিস বা আইনজীবীর চেম্বারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার দিন শেষ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)-এর আধুনিক ই-রিটার্ন সিস্টেমের কল্যাণে এখন আপনি ঘরে বসেই আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ দিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
তবে, অনলাইনে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে তথ্যের সামান্য গরমিল হলে অডিট বা জরিমানার ঝুঁকি থাকে। তাই The Justice Corner-এর আজকের ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে দেখাবো কীভাবে নির্ভুলভাবে অনলাইনে আপনার আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন।
ই-রিটার্ন শুরু করার আগে যা যা লাগবে
- কম্পিউটার বা মোবাইলে বসার আগে নিচের কাগজগুলো স্ক্যান করে বা তথ্যগুলো হাতের কাছে গুছিয়ে নিন:
- আপনার ই-টিআইএন (e-TIN) নম্বর।
- এনআইডি (NID) দিয়ে রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর (ওটিপি ভেরিফিকেশনের জন্য)।
- আয়ের প্রমাণপত্র (বেতন শিট বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
- বিনিয়োগের প্রমাণ (ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র বা ইন্স্যুরেন্সের কাগজ—কর কমানোর জন্য)।
ধাপ ১: এনবিআর পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন বা লগ-ইন
প্রথমে এনবিআর-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট etaxnbr.gov.bd-এ যান।
- নতুন হলে: 'Registration' বাটনে ক্লিক করে টিআইএন ও মোবাইল নম্বর দিয়ে একাউন্ট খুলুন।
- পুরাতন হলে: টিআইএন ও পাসওয়ার্ড দিয়ে 'Log In' করুন।
ধাপ ২: আয়ের উৎস নির্বাচন (Assessment Information)
লগ-ইন করার পর 'Return Submission' অপশনে যান। এখানে আপনাকে ২০২৫-২০২৬ করবর্ষ সিলেক্ট করতে হবে এবং আপনার আয়ের উৎসগুলো (বেতন, ব্যবসা, বা বাড়ি ভাড়া) টিক চিহ্ন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।
ধাপ ৩: আয়ের বিবরণ ও কর রেয়াত (Rebate)
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ১. আয়ের তথ্য: 'Salaries' বা 'Business' সেকশনে আপনার বাৎসরিক মোট আয় বসান। সরকারি বা বেসরকারি চাকরি অনুযায়ী করমুক্ত সুবিধাগুলো সিস্টেম অটোমেটিক বাদ দিয়ে দেবে। ২. কর রেয়াত (Rebate): আপনার যদি ডিপিএস, জীবন বীমা বা সঞ্চয়পত্র থাকে, তবে 'Rebate' সেকশনে তার তথ্য দিন। এটি আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেবে।
ধাপ ৪: সম্পদ ও দায়ের হিসাব (Assets & Liabilities)
অধিকাংশ মানুষ এই ধাপেই ভুল করেন। এখানে আপনাকে দেখাতে হবে:
- সম্পদ: জমি, ফ্ল্যাট, সোনা, আসবাবপত্র এবং ব্যাংকে জমানো টাকা।
- দায়: ব্যাংক লোন বা ব্যক্তিগত ধার।
- পার্থক্য বা Difference: ফর্মের শেষে একটি অপশন থাকে 'Difference'। আপনার গত বছরের সম্পদ + এই বছরের আয় - খরচ = বর্তমান সম্পদ। এই সমীকরণ মিলে গেলে Difference হবে '0' (শূন্য)। যতক্ষণ না এটি শূন্য হচ্ছে, ততক্ষণ রিটার্ন সাবমিট করা যাবে না।
ধাপ ৫: পেমেন্ট ও সাবমিশন
সব তথ্য সঠিক থাকলে 'Tax and Payment' অপশনে আপনার মোট করের পরিমাণ দেখাবে। আপনি বিকাশ, নগদ, রকেটে বা কার্ডের মাধ্যমে এই টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। পেমেন্ট হয়ে গেলে 'Submit Return' বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬: PSR সংগ্রহ
রিটার্ন জমার সাথে সাথেই আপনি একটি Acknowledgement Receipt বা প্রাপ্তিস্বীকার পত্র পাবেন। এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। এটিই আপনার PSR, যা ব্যাংক লোন, গাড়ির ফিটনেস বা বিভিন্ন সরকারি সেবার জন্য বাধ্যতামূলক।
সতর্কতা ও টিপস
- সময়সীমা: সাধারণত ৩০ নভেম্বর রিটার্ন জমার শেষ সময়। এই সময়ের পরে জমা দিলে সেটি "Belated Return" হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনাকে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
- জটিলতা এড়াতে: আপনার যদি একাধিক ফ্ল্যাট, বড় অংকের লোন বা শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ থাকে, তবে নিজে চেষ্টা না করে একজন পেশাদার ট্যাক্স আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
